ড. আর এম দেবনাথ :
‘বিদিশার বিদেশি ব্যাংক হিসাবে টাকার পাহাড়’ শিরোনামে যুগান্তরে একটি বড় খবর পাঠ করে আমার এই বদ্ধমূল ধারণাটি আরও শক্ত হয়েছে যে, বাংলাদেশ দুই বড় সমস্যার সম্মুখীন। এর একটিকে আমরা বলতে পারি ‘আপদ’ এবং আরেকটিকে ‘বিপদ’। কোনটি ‘আপদ’ আর কোনটি ‘বিপদ’ তা পাঠকরা নিজ বিচারে ঠিক করে নিতে পারেন।
আমি আলোচনার জন্য ‘কালো টাকা’ (অপ্রদর্শিত টাকা) ও অর্থ পাচারকে ‘আপদ’ হিসাবে চিহ্নিত করছি। আর ‘খেলাপি ঋণ’কে (ক্লাসিফাইড লোন) চিহ্নিত করছি ‘বিপদ’ হিসাবে। এই ‘আপদ’ ও ‘বিপদ’ সম্পর্কে নানা জন নানা মত পোষণ করেন। এর মধ্যে কারও কারও মতে, যতদিন উন্নত ও সভ্য দেশগুলো বিনা প্রশ্নে ‘কালো টাকা’কে গ্রহণ করবে, এর মালিকদের নাগরিকত্ব দেবে, ব্যবসা-বাড়িঘর-সহায়-সম্পত্তি করার অবাধ সুযোগ দেবে, ততদিন বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোনো উন্নয়নশীল দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হবে না। এসব দেশে কালো টাকা বানানোর প্রক্রিয়াও খতম হবে না।
এদিকে ‘বিপদ’ হিসাবে চিহ্নিত আর একটি বড় সমস্যা সম্পর্কে অনেকের মত হচ্ছে : যতদিন সরকার ‘ব্যাংক-ফিন্যান্স লেড গ্রোথে’র নীতি অন্ধের মতো অনুসরণ করবে এবং শিল্পায়ন ও ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণভাবে ব্যাংকের অর্থ জোগানের ওপর নির্ভর করবে, ততদিন খেলাপি ঋণের সংকট থেকে ব্যাংকিং খাতকে পুরোপুরি মুক্ত করা সম্ভব হবে না। বলা বাহুল্য, এই ধারণা দুটোকে একদম অমূলক বলা যাবে না। কেন তা একটু ব্যাখ্যা করে বলা দরকার।
প্রথমেই ‘কালো টাকা’ (অপ্রদর্শিত টাকা) এবং তার পাচার প্রসঙ্গে আসি। এর তিনটি বড় দিক আছে : কালো টাকা কীভাবে তৈরি হয়, এই টাকা ভোগের ব্যবস্থা কী, কালো টাকা বিদেশে কীভাবে যায়। শেষ কথা, কোথায় যায়? ‘কালো টাকা’ কীভাবে তৈরি হয় এর জন্য বিরোধীদলীয় লোকেদের কথা শোনার দরকার নেই। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীর ভাষ্য আছে। সবচেয়ে বড় কথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সঙ্গে এ টাকার উৎস সম্পর্কে অনেকবার বলেছেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উদ্বোধনকালে (০৩.১০.১৯) তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা চলতি বাজেটে ১৭৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ উইপোকারা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে অর্থ লুটে নিচ্ছে।’ এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান (১৩.০১.২১) বলেছেন, ‘সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে এক ধরনের জোয়ার উঠে গেছে।’ আবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এ সম্পর্কে বলেছেন একটু ভিন্ন কথা (১.১০.১৯)। তার মতে, বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। তাই এসব প্রকল্পে ‘কিছুটা অর্থের অপব্যবহার বা নড়চড় হবে। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায়ও তা হয়েছে।’
উপরোক্ত বক্তব্যগুলো থেকে বড় বড় দুর্নীতি কীভাবে ঘটছে, কোথায় ঘটছে তা আমরা বুঝতে পারছি। আর উদাহরণের দরকার নেই। মাঝারি ও ছোট ছোট দুর্নীতির কথাও বাদ দিলাম। দ্বিতীয় প্রশ্ন, এই টাকা ভোগের ব্যবস্থা কী? দুর্নীতিলব্ধ টাকা ভোগ করতে না পারলে কে যায় এই টাকা পকেটস্থ করতে। এসব টাকা ভোগের এক ধরনের ব্যবস্থা আছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের কাছে। তারা শিল্পের জমি, বিল্ডিং, কাঁচামাল, স্টক, রপ্তানি পণ্য ইত্যাদিতে বিপুল টাকা লুকিয়ে ফেলতে পারে। ছোট পরিমাণের টাকা ফ্ল্যাটে। এক খণ্ড জমিতেও লুকানো যায়। কিছু সামান্য দেশীয়ভাবে খেয়েদেয়েও খরচ করা যায়। কিন্তু বেশি পরিমাণ টাকা হলেই সমস্যা। তা দেশে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই।
ব্যাংকে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। ১০ লাখ টাকা জমা ও তোলার ক্ষেত্রেই ব্যাংকে জবাবদিহি করতে হয়। রয়েছে আয়কর বিভাগ, মানি লন্ডারিং প্রিভেনশন আইন ও দুদক। তারপর রয়েছে ‘সুশীল সমাজের’ কাছে বদনামের ভয়। অতএব টাকা বিদেশেই পাঠানো যাক। আগে ‘হুন্ডিকেই’ মানুষ টাকা পাচারের প্রধান মাধ্যম মনে করত। এখন তা হয় ব্যাংকের মাধ্যমে- ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। এ পদ্ধতিতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে বলে প্রতিদিন খবর ছাপা হচ্ছে। এই জায়গাতেই প্রশ্ন- এটা কী করে সম্ভব?
দেখা যাচ্ছে, কালো টাকার গন্তব্য হচ্ছে উন্নত দেশগুলো : আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় দেশ, দুবাই, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি দেশ। এসব দেশে কি আমাদের মতো ‘মানি লন্ডারিং প্রিভনেশন আইন’ নেই? শত হোক তারাই তো আমাদের দিয়ে এসব আইন করিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, আমরা কালো টাকা, সন্ত্রাসী টাকার বিচার করছি, তা ধরছি, কঠোরতর বিধিবিধান করছি; কিন্তু সেসব দেশে এসবের বালাই নেই। যদি থাকত, তাহলে কী করে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে বাংলাদেশিসহ পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোর লোক সেসব দেশে ব্যবসা করে, বাড়িঘর করে? টাকা ব্যাংকে রাখে?
আবার মজার ঘটনা- কালো টাকা নিয়ে উন্নত দেশে গেলে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র আছে, যা কিছু উন্নত দেশের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে যে কেউ টাকা রাখতে পারে। কোনো প্রশ্ন করা হয় না। ওইসব দ্বীপরাষ্ট্রে কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না। সেখানে শত শত ‘আইনি ফার্ম’ আছে। ইনভেস্টমেন্ট কনসালটেন্ট, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট জাতীয় শত শত কোম্পানি আছে। তারা আমাদের কালো টাকার মালিকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, আইনি সহায়তা দেয়।
আমাদের এ দেশের বেআইনি টাকাওয়ালা পাচারকারীদের ‘ফান্ড ম্যানেজার’ হিসাবে কাজ করে তারা। ওইসব টাকা দ্বীপদেশ থেকে ‘মেইনল্যান্ডে’ নেয়, যা আবার উন্নয়নশীল দেশে পোর্টফলিও ও ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে আসে। টাকা বানায়, আবার তা নিয়ে যায় এবং পাচারকারীদের গোপন অ্যাকাউন্টে তা লভ্যাংশ হিসাবে জমা দেয়। এসব তথ্য সবারই জানা। নিয়মিতভাবে এসব খবরের কাগজে ছাপা হচ্ছে। এমনকি নাম-ধাম-ঠিকানাসহ ছাপা হয়েছে।
আমার প্রশ্ন, উন্নত দেশগুলো এসব কী করে করে? পাচারের টাকা ‘মানি লন্ডারিংয়ের’ অধীনে বিচারযোগ্য। এটা মনিটর করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা আছে। তারা তা খবরদারি করে। তাহলে আমরা খবরদারির মধ্যে, উন্নত দেশগুলো কেন নয়? বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা কানাডায় পড়াশোনা বাদ দিয়ে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করবে-এটা কী করে ওই দেশের আইন অনুমোদন দেয়? এ প্রশ্নগুলো আমার।
এ কারণেই নিবন্ধের শুরুতেই বলা হয়েছে : যতদিন পাচার করা কালো টাকা দিয়ে উন্নত দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে, যতদিন বিনা প্রশ্নে কালো টাকা ওইসব দেশ গ্রহণ করবে, যতদিন ওই টাকা দিয়ে বাড়িঘর-ব্যবসা সেখানে করা যাবে, ততদিন দেশীয়ভাবে কালো টাকা বানানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধাই কার্যকর হবে না। শত হোক দেশে নয়, বিদেশে কালো টাকা আরামের সঙ্গে ভোগ করা সম্ভব। প্রয়োজনবোধে সেই টাকার একাংশ ‘ভালো টাকা’ হিসাবে দেশেও আনা যাবে। এ অবস্থায় করণীয় কী?
আমি মনে করি, সুশীল সমাজের এখানে দায়িত্ব আছে। তারা সরকারের কাছে দাবি জানাতে পারে, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন লাগু করার জন্য। ওই বিধানের সুবিধা নেওয়ার জন্য সরকার বিদেশে রক্ষিত বাংলাদেশিদের অবৈধ সহায়-সম্পদ, ধনদৌলত জাতীয়করণ করতে পারে। এবং ওই টাকা উদ্ধারে জাতিসংঘ সহযোগিতা করতে বাধ্য। আমি বুঝি না সুশীল সমাজ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো এ কাজটি কেন করে না? দ্বিতীয়ত, উন্নত দেশ যারা অবাধে কালো টাকার বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেয়, ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দেয়, স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেয়, সেসব দেশের দূতাবাসে তারা ‘মেমোরেন্ডাম’ দিয়ে আপত্তি জানাতে পারে।
দূতাবাসগুলোর সামনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে পারে। সুশীল সমাজের লোকরা সংবাদপত্রে নিবন্ধ ছাপাতে পারে। তারা গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারে। যেসব দেশে অবৈধভাবে বাংলাদেশিরা টাকা নিয়ে গিয়ে ঘরবাড়ি বানাচ্ছে, ব্যবসা করছে, সেসব দেশে সুশীল সমাজের লোকরা গিয়ে জরিপ চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এবং এসব তথ্য সরকারকে দিতে পারে। কারণ সরকার বলে যাচ্ছে, তাদের কাছে তথ্য নেই।
অথচ মহামান্য হাইকোর্ট বলেছেন (২৩.১১.২০), ‘অর্থ পাচারকারীরা দেশ-জাতির শত্রু’। অর্থ পাচারকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল আন্তর্জাতিক সংগঠন। তারা গবেষণাও করে। তারা আমাদের হাইকোর্টকে এ ক্ষেত্রে সাহায্য করলে জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। এমনকি সুশীল সমাজের যারা ‘কালো টাকা’র বিরুদ্ধে স্বদেশে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন, তারাও তো উন্নত দেশগুলোর দূতাবাসের সামনে গিয়ে একটু প্রতিবাদ করতে পারেন।
অন্তত বলতে পারেন ‘মানি লন্ডারিং প্রিভেনশন আইন’ কার্যকর করতে। অবৈধভাবে পাচার করা টাকা সাদরে/বিনা প্রশ্নে গ্রহণ না করতে, তাদেরকে এর বিনিময়ে নাগরিকত্ব না দিতে। এতে দেশ উপকৃত হবে এবং এটি হবে একটি কাজের কাজ। শত হোক, বেআইনিভাবে হস্তগত কালো টাকা দেশে কিংবা বিদেশে ভোগ করা না গেলে এই টাকা সংগ্রহে বিস্তর লোক নিরুৎসাহিত হবে।
এবার কিছু কথা ‘বিপদ’ সম্পর্কে। বিপদ মানে খেলাপি ঋণ। অনেকের মতো আমিও একমত যে, যতদিন পর্যন্ত ব্যাংক ঋণই হবে শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের একমাত্র উপায়, ততদিন খেলাপি ঋণের বোঝা কমানো সম্ভব নয়। এ কথা সবারই জানা, আমরা ‘ব্যাংক-ফিন্যান্স লেড গ্রোথ’ মডেল অনুসরণ করছি। চীন, ভারত ও পূর্ব এশীয় দেশগুলোও তাই। আমাদের মতো দেশে পুঁজি সরবরাহের একমাত্র উৎস হয়ে উঠেছে ব্যাংক। যারাই এই মডেল অনুসরণ করছে, তাদেরই খেলাপি ঋণ সংকট প্রকট।
প্রতিবেশী ভারত থেকে তো ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে বহু শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী উধাও হয়ে গেছে। চীনের সব টাকা সরকারি ব্যাংকের। তাদের হিসাব তারা ছাড়া কেউ জানে না। তবে এ কথা বলাই বাহুল্য যে, তাদের খেলাপি ঋণ সমস্যা আমাদের চেয়ে ভালো নয়। জাপানও প্রথমাবস্থায় ব্যাংকের টাকায় উন্নয়ন করেছে। আমরাও এই পথ ধরেছি। ধরার কারণও আছে।
আমাদের উদ্যোক্তারা প্রথম প্রজন্মের। তাদের পুঁজি নেই। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য যে ‘কোলেটারেল’ (বন্ধকি সম্পত্তি) লাগে, অনেকের তা-ও নেই। অনেকের ব্যবসায়িক, বিপণন অভিজ্ঞাও নেই। এর মধ্যেই শিল্পায়ন করতে হচ্ছে। দেশে শিল্পের অগ্রগতি হয়েছে- এ কথা বলাই বাহুল্য। তৈরি বস্ত্রশিল্প, ওষুধশিল্প, ইস্পাতশিল্প, সিমেন্টশিল্প, চিনিশিল্পসহ অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে। রপ্তানিমুখী নানা শিল্প হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংকের ঋণই পুঁজির মুখ্য উৎস। শেয়ারবাজারের ভূমিকা নগণ্য। বছরে দুই-চারটি নতুন কোম্পানির শেয়ারও বাজারে আসে না। এক লাখ টাকা পুঁজির প্রাইভেট কোম্পানিও পঞ্চাশ-একশ-দুশ কোটি টাকার ‘এলসি’ করে। ব্যবসা করে। এসব যেমন সত্য, তেমনি পাশাপাশি এ কথাও সত্য যে, খেলাপি ঋণ দিন দিন বাড়ছে। অর্থনীতিবিষয়ক কলাম লেখক হিসাবে আমি খেলাপি ঋণের ওপর লিখছি স্বাধীনতার ৫-৭ বছর পর থেকেই। আজও লিখে যাচ্ছি। খেলাপি ঋণ বাড়ছে তো বাড়ছেই। যদি আমাদের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা শেয়ারবাজারে যেতেন, সেখানে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি সংগ্রহ করতেন, তাহলে ব্যাংকের বোঝা কমত।
ব্যাংক ছোট-মাঝারি শিল্প-ব্যবসায় ঋণ দিতে পারত, যেখানে খেলাপি ঋণ কম হয়। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতি আছেন, যারা নিজের টাকা বিদেশে রাখেন, এমনকি ব্যাংক ঋণের টাকাও বিদেশে নিয়ে গেছেন। এসব সমস্যা বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের। তাদের অনেকে সহজ শর্তে, অল্প সুদে, অনায়াসে ঋণ পেয়ে পেয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ‘ক্যাপাসিটি’ও তৈরি করেছেন।
এখন তাদের ক্যাশ ফ্লো কম। পরে তারাও খেলাপি হবেন। অথচ যারা প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভালো করছে, তারাও যদি শেয়ারবাজারে যেত, তাহলে খেলাপি ঋণ এভাবে বাড়ত না। আবার বড়রা খেলাপি হয় ইচ্ছা করে, সুবিধা আদায়ের জন্য। এ অবস্থায় ‘ব্যাংক-ফিন্যান্সের’ নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প বের করতে না পারলে খেলাপি ঋণ কমানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। আর খেলাপি ঋণের বোঝা শেষ পর্যন্ত সরকারকেই বহন করতে হবে।
ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়